নামগুলো এত বিখ্যাত যে তাঁদের যেকোনো একজনের জন্মদিনটাই ফুটবলের জন্য বড় এক উপলক্ষ।ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এখন তো আর শুধু তাঁর সময়ের নন, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারদের একজন। নেইমারের আবির্ভাব সর্বকালের সেরাদের মধ্যে যাওয়ার মতো প্রতিশ্রুতি নিয়ে। এখনো সেখানে যেতে পারেননি, সময় ফুরিয়ে এলেও একদম শেষ হয়ে যায়নি। তবে নিজের সময়ের সেরাদের মধ্যে অবশ্যই থাকবেন ব্রাজিল ফরোয়ার্ড। কার্লোস তেভেজের শুরুটাও ‘নতুন ম্যারাডোনা’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। শেষ পর্যন্ত আরও অনেক আর্জেন্টাইনের মতো তিনিও সেটা হতে পারেননি। কিন্তু নিজের সময়ে ক্লাব ও জাতীয় দলে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন তেভেজ।এই তিন তারকার জন্মদিন যখন একই দিনে হয়, সেটা একটা দারুণ ব্যাপারই তো। ৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম হয়েছিল এই তিনজনেরই। আজ সেই দিন।
রোনালদোর আজ ৪০তম জন্মদিন। পাঁচবার ব্যালন ডি’অরজয়ী পর্তুগিজ কিংবদন্তি এখনো চুটিয়ে খেলে যাচ্ছেন। সৌদি প্রো লিগের দল আল নাসরের হয়ে নিয়মিতও গোলও পাচ্ছেন। এই মৌসুমে ২৫ ম্যাচে পেয়েছেন ২৩ গোল। প্রো লিগে ১৭ ম্যাচে ১৫ গোল করে গোলদাতাদের তালিকায় শীর্ষেও রোনালদো। ক্লাব ও জাতীয় দল নিয়ে ৯২৩ গোল করা রোনালদোর বয়স ৩০ পেরিয়েও ধার কমেনি। ৩০ পেরোনোর আগে করেছেন ৪৬৩ গোল। আর ৩০ পেরিয়ে এ পর্যন্ত করেছেন ৪৬০ গোল।নেইমারের আজ ৩৩তম জন্মদিন। ইউরোপ ঘুরে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল হিলালেও দেড় বছর থেকে ব্রাজিলে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরেছেন নেইমার। ছয় মাসের চুক্তি করেছেন ক্লাবটির সঙ্গে। বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও দুবার লা লিগা জিতেছেন নেইমার। পিএসজির হয়েও পাঁচবার জিতেছেন লিগ আঁ। তবে ইউরোপে যে লক্ষ্য নিয়ে গিয়েছিলেন নেইমার, তা পুরোপুরি পূরণ করতে পারেননি। জিততে পারেননি ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার ব্যালন ডি’অর কিংবা ফিফা বেস্ট।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি ও জুভেন্টাস মাতানো তেভেজের আজ ৪১তম জন্মদিন। ইউনাইটেডের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী সাবেক এ ফরোয়ার্ড ২০২২ সালে পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানান। সে বছরই কোচিংয়ে নেমে পড়েন তেভেজ। দায়িত্ব নেন আর্জেন্টিনার প্রিমেরা ডিভিশনের ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালের। ক্লাবটি ছেড়ে ২০২৩ সালে ইন্দিপেনদিয়েন্তের কোচের দায়িত্ব নেন তেভেজ।
তবে ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামের এই যুগে এখন তারকাদের জন্মদিন আর আলাদা করে মনে রাখতে হয় না। রোনালদো-নেইমার-তেভেজের একই দিনে জন্মের ব্যাপারটাও তাই অনেকের জানা। তবে ফুটবলের প্রতিভাপ্রসবা এই দিনটি শুধু এই তিনজনেরই নয়। ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে জন্ম নিয়েছিলেন সিজার মালদিনি নামের একজনও। মিলানের প্রতীক হয়ে যাওয়া মালদিনি পরিবারের প্রথম প্রজন্মের গল্পটা তাঁর হাত ধরেই। ১৯৬৩ সালে মিলানকে প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ এনে দেওয়া দলের অধিনায়ক ছিলেন, প্রিয় ক্লাবের এক যুগের ক্যারিয়ারে লিগও জিতেছেন চারবার। পরে কোচ হয়েও দুই দফায় মিলানের ডাগআউটে এসে জিতিয়েছেন উয়েফা কাপ, উইনার্স কাপ ও ইতালিয়ান কাপ। মিলানের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারদের তালিকা করলে ছেলে পাওলোর সঙ্গে সিজারকেও রাখতেই হবে। ২০১৬ সালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো সিজার বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো ৯৩ বছর।
নিয়ার ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন তিনি নিঃসন্দেহে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে ছিলেন বিশ্ব ফুটবলেরও অন্যতম সেরাদের একজন। ‘কার্পেথিয়ানসের ম্যারাডোনা’ হিসেবে খ্যাত হ্যাজির স্টুয়া বুখারেস্ট, রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার হয়ে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। ছিলেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা রোমানিয়া দলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকাও হ্যাজি। কিংবদন্তি এখন রোমানিয়ার শীর্ষ লিগ লিগা ওয়ানে ফারুল কনস্তান্তার কোচের দায়িত্বে। আজ তাঁর বয়স হলো ৬০ বছর।
এই বিখ্যাত ফুটবলারদের ভিড়ে একই দিনে জন্ম হয়েছিল এক বিখ্যাত কোচেরও সভেন গোরান এরিকসন। সুইডিশ এই রাইটব্যাকের ফুটবল ক্যারিয়ার খুবই সাদামাটা। কিন্তু কোচ হিসেবে সাফল্য ঈর্ষণীয়। সুইডিশ ‘আইসম্যান’ হিসেবে খ্যাত এরিকসন ক্লাব ও জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে ১০টি দেশে কাজ করেছেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। তিনটি আলাদা দেশে সুইডেন, পর্তুগাল ও ইতালি লিগ ও কাপের ডাবল জেতা প্রথম কোচও তিনি। গত বছর আগস্টে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো এরিকসন বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো ৭৭ বছর।বিখ্যাত সব ফুটবলার আর কোচের জন্ম দিয়েছে যে দিনটা, সেটাকে তো শুধু ফুটবলের দিন বলাই যায়!